Saturday, October 7, 2017

অন্য ঊড়িষ্যা

মনীষার কাছে প্রথম বেলপাহাড়ের নাম কবে শুনেছিলাম মনে নেই। হয়তো আলাপের প্রথম দিনেই। ঊড়িষ্যার এই প্রত্যন্ত জায়গাটার প্রতি ওর টান বোঝাই যেত ( ঝাড়গ্রামের কাছে যেটার নাম আপনি শুনেছেন সেটা বেলপাহাড়ি। সেটা অন্য। ) ওখানে ও মানুষ হয়েছে। ওর বাবা Tata Refractories এর প্রায় প্রথম কর্মচারী বলা যায়। সরকারি খাতায় উনিই প্রথম ওই কোম্পানির নাম তুলিয়েছিলেন, নিজে হাতে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে। তখন নাম ছিল Belpahar Refractories. তারপর পরিবার নিয়ে চলে যাওয়া, টাটা স্টীল জামশেদপুর  থেকে বদলি হয়ে। ৮৭-তে কার্ত্তিক বাবু অবসর নেওয়ার পর আর ওদের কারোরই যাওয়া হয় নি। জায়গাটার প্রতি দেখতাম টান ওদের সবারই।

আমি তাই অনেকবারই ভেবেছি ওখানে একবার ছুটি কাটাতে গেলে হয়। কিন্তু আমার ধারণা ছিল ওদিকে হয়তো মাওবাদী ঝামেলা আছে। তাই বিশেষ ভাবিনি বিষয়টা নিয়ে। বস্তুত জায়গাটা ঠিক কোথায় আমার সেটাও আন্দাজ ছিল না।

এ বছর পুজোয় কোথায় যাওয়া যায় ভাবতে ভাবতে হটাৎ মনে হলো "বেলপাহাড় গেলে কেমন হয়"? গুগল ম্যাপ খুলে রাস্তা নিয়ে একটু গবেষণা করলাম কয়েকদিন। এদিক ওদিক বিভিন্ন লোকের সঙ্গে কথা বার্ত্তা বলে শেষমেষ যেটা ঠিক করলাম তা হলো প্রথম দিন পানিকোলি হয়ে কেওঁঝাড় (এটাই সঠিক স্থানীয় উচ্চারণ - কেওনঝাড় নয়) যাবো। সেখানে পরের দিনটা থাকবো, কারণ দেখলাম ওখানে দেখার অনেক কিছু আছে - ঝর্ণা বা প্রাচীন মন্দির। তারপর চলে যাবো সম্বলপুর হয়ে ঝাড়সুগুদা। বেলপাহাড় তার পাশেই। আরেকটা জিনিস ঠিক করলাম। যদি দেখি রাস্তা ভালো, তাহলে বেলপাহাড় থেকে একদিন টুক করে সুন্দরগড়-টা ঘুরে আসবো। আমার জেঠামশাই এখানে থাকতেন ষাটের দশকে। More importantly, আমার বাবা মা'র বিয়ে হয়েছিল এখানে - ১৯৬০ সালে। সারাজীবন শুনেইছি শুধু, যাইনি কখনো।

ফেরার জন্য ঠিক হলো ভুবনেশ্বর নয়, তার একটু আগে ঢেঙ্কানল এ আসবো। ওখানে সিং দেওদের প্যালেস শুনলাম আজকাল ভাড়া দেয়া হচ্ছে। ওনারা ওখানকার রাজা। সেখানেই থাকবো ঠিক করলাম। এই খবরটি দেবার জন্য মনীষা ও আমি facebook friend দীপ ব্যানার্জীর কাছে কৃতজ্ঞ।

পুরো রাস্তা সাকুল্যে দুহাজার কিলোমিটার-এর কম। কিন্তু প্রায় কিছুই জানি না রাস্তা সম্বন্ধে। এই রুট টা লিখতে লাগলো দু প্যারা। ঠিক করতে লেগেছিলো দু সপ্তাহের বেশি। বেরোনোর আগে প্রতিবার সম্পূর্ণ নতুন কোথাও গেলে যে হালকা ভয়টা লাগে সেটা লাগছিল। সব ঠিক ঠাক হবে তো? গাড়ীতে মেয়ে বৌ থাকবে তাই চিন্তা টা একটু বেশি। তবে মনীষা ফ্লুয়েন্ট উড়িয়া বলতে পারে, সেটা একটা নিশ্চিন্তি দেয়। কিন্তু চিন্তা ছিল না সেটা বলতে পারি না। তবে সত্যি বলতে কি, হাল্কা টেনশন না থাকলে কি তেমন জমতো?

কেওঁঝাড় যাবার সাধারণ রাস্তা হলো পুরোনো জামশোলা হয়ে Bombay Road দিয়ে। সেটা নোব কি নোব না ঠিক করতেই অনেক সময় লাগলো। পরে দেখলাম না নিয়ে ভালোই করেছি। ১০০ কিলোমিটার কম হলেও আসতে লাগে বারো ঘন্টা। রাস্তায় কাজ হচ্ছে এবং জঘন্য খারাপ রাস্তা। পানিকোলি দিয়ে আমার লাগলো ৭ ঘন্টা। মাখনের মতো রাস্তা - প্রায় পুরোটাই।

পানিকোলি হলো ভদ্রকের পরে একটা ছোট্ট জায়গা। সেখান থেকে ডানদিকে ঘুরতে হয়। একটা flyover আছে, সেটার ঠিক আগে বাঁ দিকে নেবে flyover এর তলা দিয়ে ডান দিকে ঘুরতে হবে। এখন থেকে কেওঁঝাড় ১২০ কিলোমিটার। প্রায় পুরোটাই চার লেনের রাস্তা। ফাঁকা রাস্তা। জায়গায় জায়গায় জঙ্গল। অপূর্ব সুন্দর লাগছিল এমন রাস্তায় গাড়ি চালাতে। রাস্তায় পড়লো ঘাটগাঁও। হাইওয়ে থেকে ১ কিমি ভেতরে জাগ্রত তারিণী মন্দির। ঢুকলাম সেখানে। দুপুরবেলা মায়ের ঘুমোনোর সময়। মন্দিরের দরজা বন্ধ। আমরা আবার ফিরে চললাম আমাদের গন্তব্যের দিকে। তারিণী মন্দিরের কাছেই একটা সুন্দর হোটেল ও আছে। কেউ চাইলে এখানেও এক রাত কাটাতে পারেন। জায়গাটা গভীর জঙ্গলের ভেতর। কিন্তু পরিষ্কার রাস্তা।

কেওঁঝাড় শহরটা ছোট্ট। থাকার যোগ্য নয়। কিন্তু ওখানকার OTDC পান্থনিবাস-টা খুব সুন্দর জায়গায়। শহর থেকে একটু বাইরে। জঙ্গলের কোলে। পেছনে অপূর্ব সবুজ পাহাড়। এই জায়গাটার পরেই জুডিয়া ঘাট শুরু হয়। সামনের রাস্তা দিয়েই আমরা সম্বলপুর যাবো।

পান্থনিবাস জায়গাটা সুন্দর, তার কাজের ছেলেপিলেরাও খুব ভালো। হাসিমুখে কাজ করে। কিন্তু facilities দারুন কিছু নয়। AC টা কাজ করে, তো গিসার-টা করে না। এরকম। খাবার সাদামাটা। ইংরিজিতে যাকে বলে "nothing to write home about " - বা "বাড়ীতে লিখে পাঠাবার মতো কিছু নয়"।

সেদিন পৌঁছতে প্রায় বিকেল হয়ে গেছিলো। সারাদিনের গাড়ি চালানোর ধকল। তাই এদিক ওদিক যাবার প্রশ্নই নেই। শুয়ে শুয়ে গল্প করলাম নিজেদের মধ্যে। পেছনের সবুজ পাহাড় দেখলাম। জায়গাটা আদিবাসী-দের। এবং যা হয় - প্রত্যেকে হত দরিদ্র। পেছনের একটা ছোট জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে মাথায় কাটা গাছের ডাল নিয়ে সবাই ফিরছে বাড়ী। প্রচণ্ড ওজন হয় ওগুলোর। ওই রোগা জীর্ণ শরীরে কি করে পারে জানি না। বেশীর ভাগই মহিলা। একজনকে দেখে মনে হলো বেশ অসুস্থ। শরীরটা বোধ হয় দিচ্ছিলো না। মাথার বোঝা নাবিয়ে জিরোচ্ছিলো একটু। সেটাকে যখন মাথায় তুললো তখন বুঝলাম ওটা প্রচণ্ড ওজনের একটা বোঝা। এমনিতে ওদের হাঁটা দেখলে মনে হয় কোনো ব্যাপারই নয়। আদতে একদমই তা নয়।

এই অঞ্চলের ব্যাপারে সাধারণ শহুরে বাঙালির দুটো ভীতি আছে - এক মশা, দুই মাওবাদী। মশা নিয়ে ভয়টা অমূলক নয়। কিন্তু খোদ কলকাতায় যখন রোজ লোকে ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ায় মারা যাচ্ছে, তখন তো আমরা শহর ছেড়ে পালাচ্ছি না। তাহলে কেওঁঝাড়ের নাম শুনে অত ভয় পাওয়া কেন রে বাপু? আমি কি Europe এ থাকি?

মাওবাদী-র ভয়টা অমূলক কিনা জানি না। কিন্তু আমার কখনোই রাস্তায় ভয় করে নি। আমি জগদলপুর ঘুরে এসেছি নিজের গাড়িতে। কোথাও মাওবাদীর ভয় করে নি। সেখানে তাও প্রচুর বন্দুক ধারী কম্যান্ডো দেখেছিলাম। এখানেতো তাও নেই। যাই হোক। ভয় পাওয়া বাঙালীর স্বভাব। সাহসী কাজ করাও বাঙালীর স্বভাব। আমি ওই দ্বিতীয় সারিতেই থাকতে চাই। যদিও আমি নিজে মনে করি না উড়িষ্যার জঙ্গলের রাস্তায় - তাও আবার highway - গাড়ি চালিয়ে আমি সাংঘাতিক সাহসী কিছু কাজ করেছি। যাই হোক।

পরের দিন আমরা দুটো ঝর্ণা দেখতে গেলাম প্রথমে। কাছেই সানাঘাগ্রা আর একটু দূরে বড়াঘাগ্রা। সানা যাওয়াটা কোনো ব্যাপার নয়। রাস্তার পাশেই। বড়া টা রাস্তা থেকে অনেক ভেতরে। এবং এই রাস্তায় কোথাও কিছু লেখা নেই। রাস্তায় কোনো লোক ও নেই। খানিক পরে ডান হাতে একটা বিশাল ড্যাম দেখলাম। সেখান থেকেও অনেক ভেতর অবধি গেলাম। কোত্থাও কিছু ঝর্ণা দেখলাম না। দু একজন স্থানীয় কে দেখলাম কিন্তু কেউ-ই ঠিক বলতে পারলো না। যাইহোক আমরা ওই ড্যাম দেখেই ফিরে এলাম। রাস্তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য কিন্তু দারুন। আমাদের কখনোই মনে হয় নি ভুল করলাম এদিকে এসে।

রাস্তায় একটা ধাবায় আমরা দুপুরের খাবার খেলাম। Again "বাড়ীতে লিখে পাঠাবার মতো কিছু নয়"। ওখানকার ম্যানেজার আমাদের বললেন আপনারা গোনাসিকা যান। ওটা নাকি দারুন জায়গা। গরুর নাক দিয়ে বৈতরণী নদীর উৎস। দেখার মতো জিনিস। বেশ। চলো যাওয়া যাক। সম্বলপুরের দিকের হাইওয়ে দিয়ে বেশ খানিকটা গিয়ে বাঁদিকে ঢোকা। তারপর আবার অনেকটা। এই বাঁদিকে ঢোকার মুখে একটা সাইনবোর্ড লাগানো আছে। তারপর একটু intuition ব্যবহার করে যেতে হবে। এও একেবারেই ফাঁকা রাস্তা। জায়গাটা সুন্দর। পাহাড়ের ওপর। পাথর কাটা একটি গো নাসিকা - তার দুই নাক দিয়ে জল গড়াচ্ছে। সেটা কোথা থেকে আসছে নাকি বোঝা যায় না। এর ওপরে একটা মন্দির করা আছে। সেখানে একটি গঙ্গা মূর্তি বসানো আছে। একটা পাকানো মতো গাছ আছে, যেটা শিবের জটা। গঙ্গাকে ধারণ করেছেন। ছবি তুলতে দিলো না ওখানকার পুরোহিত। একটি জন-মানুষ নেই কোথাও। নির্জনতার শেষ কথা।

খানিক সময় কাটিয়ে ফিরে এলাম। একই রাস্তা ধরে।

কেওঁঝাড়ে আমার আরো কয়েকটা জায়গা দেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু সেগুলো অনেক দূরে দূরে। এক হলো কিচকেশ্বরী-র মন্দির। এ ছাড়া রাবণ ছায়া বা সীতাভিনজি গুহা চিত্র। আরো দুটো ঝর্ণা আছে - খন্ডধারা ও ভীমকুন্ড। আমার মনে হয় আরেকবার হাতে সময় নিয়ে আস্তে হবে। পান্থ নিবাসে কিন্তু প্রচুর বাঙালি ট্যুরিস্ট ছিলেন। সবাই জাজপুর অবধি ট্রেন-এ এসে বাকিটা গাড়িতে এসেছেন। এক ভদ্রলোক পুরোনো রাস্তা দিয়ে নিজের গাড়িতে বারো ঘন্টায় এসেছেন। ওনার সঙ্গে কথা বলে মনে হলো জীবনে কোনোদিন গুগল ম্যাপ কাকে বলে শোনেন নি। আমার ধারণা ওনার হয়তো ড্রাইভার ছিল। ওরকম খাজা একটি লোক নিজে গাড়ি নিয়ে বেরোবেন মনে হয় না।







Monday, October 2, 2017

Off-beat Orissa

We came back from our Orissa trip this afternoon at around 2.45 pm. This morning I drove in from Chandipur near Balasore. That's why we were so early. In the afternoon hours Satragachhi was quite empty. It was a bliss. We could have tried to come yesterday itself but then it being the day of Muharram I chose not to drive through Muslim majority Howrah. I have terrible memories of being held up on the road for hours during one particular Muharram. 

Now on with the travelogue. 

The Route 

Calcutta to Keonjhar - We went from Calcutta to Keonjhar on day one where we spent two nights. We went via Panikoli next to Bhadrak. From there we took a right turn towards Keonjhar. This Panikoli to Keonjhar is a 4-lane national highway which is almost 80 per cent complete. There are sections where you need to drive on only one side of the road. But since this road itself is very desolate there is hardly any traffic. One can easily hit speeds of 120 kmph. There was just one section where one has to drive through a village for about 10 kms. Even this was not too bad. 

Keonjhar to Belpahar - From Keonjhar there is only one route to go to Sambalpur and we had to take it. It's a terrible 220 kms to Sambalpur along the old highway. Craters within craters. On the ghat section there are trucks that have toppled over. It's really sad. One would think NHAI has forgotten about the existence of this road. 

From Sambalpur there is a fantastic 4 laned state highway to Jharsuguda (SH 10) from where we turned left towards Belpahar where we stayed for two nights. 

Sundargarh Day Trip - On our second day in Belpahar we decided to go to Sundargarh. We drove to Jharsuguda to the State Highway and turned left towards Rourkela. Sundargarh is on this road. About 30 kms from Jharsuguda. 

Belpahar to Dhenkanal - From Belpahar we drove to Dhenkanal.